Dr. Neem on Daraz
Victory Day

হরিরামপুরে ‘ভেলা ভাসানি‍‍` উৎসব


আগামী নিউজ | হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩, ০২:৪৯ পিএম
হরিরামপুরে ‘ভেলা ভাসানি‍‍` উৎসব

ছবি: আগামী নিউজ

মানিকগঞ্জঃ মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে গ্রামীণ সংস্কৃতিতে ‘ভেলা ভাসানি’ অনুষ্ঠান ও মেলা একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। আগে এ এলাকায় বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মেলা বসত। গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ভেলা ভাসানি উৎসব হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা শান্দার পাড়ায় বেদে সম্প্রদায়েরা তা আজও টিকিয়ে রেখেছে। 

 

বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ভেলা ভাসানি উৎসবকে কেন্দ্র করে সকল ধর্মের লোকজনের সমন্বয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা শান্দার পাড়ায় বৃহস্পতিবার রাতে ভেলা ভাসানি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

 

জানা গেছে, ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবার রাতে ভেলা ভাসানি উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ মেলা বেশ জমে উঠে। দূরদূরান্ত থেকে গ্রামীণ ঐতিহ্য ও মেলা দেখতে দলে দলে লোকজন আসে। এমনকি দেশি বিদেশি পর্যটকদেরও আকর্ষণ করে এই ঐতিহ্য। আমার বাপ দাদারা এই ভেলা ভাসানো উৎসব পালন করেছে, আমরা ৫৪তম ভেলা ভাসানো উৎসব পালন করছি, এমনটাই জানালেন খাদেম উকিল মাতবার ও আনছের শাহ ফকির দরবারের খাদেম।

 

ঝিটকা এলাকার বাসিন্দা মামুন চৌধুরী জানান, শান্দার পাড়ার এই গ্রামীণ উৎসব আমি দেখে আসছি ২৩ বছর যাবৎ, অর্ধ শতাব্দীর বেশি ধরে চলছে। এই ভেলা ভাসানো উৎসব প্রায় ৪শ বছরের পুরনো। এরা আরব যাযাবর, নৌকায় জীবনযাবন করতে, পানির প্রতি তাদের একটা শ্রদ্ধাবোধ থেকেই এই ভেলা ভাসানো উৎসব পালন করে আসছে তারা।

 

বেদে সম্প্রদায়রা এখন পানি ছেরে ডাঙায় বাস করছে, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সুবিধাভোগ থেকে শুরু করে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এমনটিই জানালেন দর্শনার্থী ফরিদ মোল্লা ও স্থানীয় বাসিন্দা মো. দুর্জন। স্বপ্নে পাওয়া এই উৎসব আমরা পালন করি প্রতিবছর, এমনটাই জানালেন বেদে সম্প্রদায়ের কয়েকজন।

 

আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা হরিরামপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুমন কুমার আদিত্য জানান, বেদে সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ভেলা ভাসানো উৎসব জীবনে এই প্রথমবার দেখতে এসেছি। জীবনে অনেক স্টেশনে চাকরি করেছি, এই অন্য রকম অনুষ্ঠান আমিসহ সবাইকে অনেক আনন্দ দিয়েছে। এই উৎসব টিকে থাকুক হাজার বছর।

 

ঢাকা জোনের পুলিশ পরিদর্শক রকিবুল ইসলাম বলেন, এখানে অনেক পর্যটক এসেছেন, এটি একটি লোকজ উৎসব, বাংলাদেশের অনেক পুরণো ইতিহাস এটি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই উৎসবে শামিল হয়, এটা টুরিস্ট পুলিশের আওতার মধ্যে পরে, তাদের নিরাপদ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের অতিরিক্ত আইজিপি জনাব হাবিবুর রহমান স্যারের (বিপিএম বার, পিপিএম বার) নির্দেশে একটু ডকুমেন্টারি করছি। সারা বাংলাদেশটাকে ট্যুরিজমের জন্য সেইফ ডেস্টিনেশনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

 

জানা যায়, মুসলমানদের মধ্যে ‘ভেলা ভাসানি’ অনুষ্ঠান শুরু হয় মিলাদ পাঠের মাধ্যমে। ভেলা নির্মাণ করা হয় সাতটি কলা গাছের টুকরা দিয়ে। তার উপর বাঁশ, বাঁশের চটা ও কাগজ দিয়ে নির্মাণ করা হয় একটি ঘর। ঘরের ভেতর প্রথমত একটি মোম জ্বালানো হয়। সঙ্গে আগরবাতিও। পরে ফল-ফলাদি, শিন্নি ইত্যাদি সমর্পণ করা হয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তাদের মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্যই বিভিন্ন মানত করে। কেউ মুরগি বা মোরগ, কেউ শিন্নি, কেউ ফল-ফলাদি, আবার কেউবা টাকা-পয়সা। যে যাই নিয়ে আসে, তার কিছু অংশ ভেলায় সমর্পণ করে। বাকি সব ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

 

অনুষ্ঠানে সারিন্দা ও ঢোলক, একতারা, দোতারাসহ আধ্যাত্মিক গানের আসর বসানো হয়। পরে ভোররাতের দিকে ঢোলের বাড়ির সঙ্গে খোয়াজ খিজিরের (আ.) উদ্দেশে পানিতে ভেলা ভাসিয়ে দেওয়া হয়। গ্রাম বাংলার এমন ঐতিহ্য ইতিহাস হয়ে হাজার বছর ধরে চলুক, সকল ধর্মের লোকজন আনন্দ উপভোগ করুক সবাই একসাথে, এমনটাই প্রত্যাশা করেন তারা।

 

এমআইসি 

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে